Friday 26 May 2017

শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ, NARESH BACHAR, ROLL NO-48


শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ

       
       একটি ব্যাক্তির সঠিক বিকাশের উপর তার ভবিষ্যৎ জীবন নির্ভর করে থাকে। 
আর এক্ষেত্রে শৈশব অবস্থা হল এমন একটি ভিত্তিস্তর যার উপর ব্যক্তির বিকাশ নির্ভর করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাল মিলিয়ে শিশুর বিকাশ যদি এগিয়ে চলে, তাহলে সেই বিকাশ হবে সুষম বিকাশ। শিক্ষা হল ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ। শিশুর সুষম বিকাশ প্রক্রিয়া নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপর, যথা - বৃদ্ধি ও বিকাশ।


       বৃদ্ধি বলতে সাধারণভাবে আমরা দৈহিক আচরণগত পরিবর্তনকে বুঝি, বৃদ্ধির ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। আর বিকাশ বলতে সাধারণভাবে আমরা দৈহিক বৈশিষ্ট্য গুলির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গুলির গুনগত পরিবর্তনকে বুঝি।

Tuesday 16 May 2017

বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ধারা ,Rabiya Khatun, Roll No-29

                 
                  বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সমাজ,
                       অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ধারা



        বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ধারা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সমাজ ব্যবস্থা  গুরুত্বপূর্ণ ভূ্মিকা পালন করে, আর অর্থনীতি ও সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম।বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যায় যে, অনেক দেশে সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ধারা উন্নত পৌঁছালে ও বেশ কয়েকটি দেশে তা খারাপ অব্যবস্থায় অবস্থান করছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মরু অঞ্চলে ফসল ভাল না হওয়ার জন্য অর্থনীতির দিক থেকে পিছিয়ে পড়ায় সেখানে সমাজ ও সংস্কৃতির ধারা উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছে না।

Quotations about Mathematicians, or by Mathematicians ( Sunanda Sardar ,Roll- 11)

Quotations about Mathematicians, or by Mathematicians

                  

                        The following are quotations about mathematicians, or by mathematicians
  • "A mathematician is a device for turning coffee into theorems."
                                —Attributed to both Alfréd Rényi and Paul Erdős
  • "Die Mathematiker sind eine Art Franzosen; redet man mit ihnen, so übersetzen sie es in ihre Sprache, und dann ist es alsobald ganz etwas anderes. (Mathematicians are [like] a sort of Frenchmen; if you talk to them, they translate it into their own language, and then it is immediately something quite different.)"
                               —Johann Wolfgang von Goethe
  • "Each generation has its few great mathematicians...and [the others'] research harms no one."
                              —Alfred W. Adler (1930- ), "Mathematics and Creativity"
  • "In short, I never yet encountered the mere mathematician who could be trusted out of equal roots, or one who did not clandestinely hold it as a point of his faith that x squared + px was absolutely and unconditionally equal to q. Say to one of these gentlemen, by way of experiment, if you please, that you believe occasions may occur where x squared + px is not altogether equal to q, and, having made him understand what you mean, get out of his reach as speedily as convenient, for, beyond doubt, he will endeavor to knock you down."
                              —Edgar Allan Poe, The purloined letter
  • "A mathematician, like a painter or poet, is a maker of patterns. If his patterns are more permanent than theirs, it is because they are made with ideas."
                             —G. H. Hardy, A Mathematician's Apology
  • "Some of you may have met mathematicians and wondered how they got that way."
                             —Tom Lehrer
  • "It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul."
                            —Sofia Kovalevskaya
  • "There are two ways to do great mathematics. The first is to be smarter than everybody else. The second way is to be stupider than everybody else—but persistent." 
                            —Raoul Bott
  • "Mathematics is the queen of the sciences and arithmetic the queen of mathematics."
                            —Carl Friedrich Gauss

প্রফেসর শঙ্কু (সায়ন্তী দাশ . রোল -৯৫)

    “প্রফেসর শঙ্কু” এই নামটা শুনলে সাহিত্যপ্রেমী বাঙালী মানসে নানা রকমের ভালোলাগার একটা মিশ্রণ হয়ত অজান্তেই ফুটে ওঠে। এই মিশ্রণের উপাদান কতকটা শঙ্কুর স্রষ্টা ক্ষণজন্মা এক বহুমুখী এক প্রতিভাবান পুরুষ
শ্রেষ্ঠের প্রতি অবচেতন শ্রদ্ধা, কতকটা শৈশব-কৈশোরের সোনালী দিন গুলোকে মনে পড়ানো মধুর আবেশ, কতকটা আবার বিজ্ঞানাঙ্গিক ফ্যান্টাসি ও এডভেঞ্চারের সমুদ্রে গা ডোবানোর আনন্দ। ছেলেবেলায় ত বটেই, বড় হয়েও এবং বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষিত হয়েও শঙ্কু পড়তে বসে কোনোদিন তার বৈজ্ঞানিক প্রাসঙ্গিকতা বা তাতে অপ-বিজ্ঞান বা অবিজ্ঞানের মাত্রা নিয়ে কোন ভাবনা আমার আসে নি। প্রথম থেকেই ধরে নেওয়া যে শঙ্কুতে বর্ণীত বিজ্ঞান বা ক্ষেত্র বিশেষে অতিপ্রাকৃত ঘটনার সমাহার নেহাতই পাঠকের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে। সত্যজিৎ বাবু হয়ত সচেতন ভাবেই বড়দের জগতের জটিলতা বাদ দিয়ে কল্পনার আকাশে মনের ঘুড়িটি ভাসিয়ে দিতে যাতে পাঠকের কোন পিছুটান অনুভব না করতে হয় তার ব্যবস্থা করে রেখে গেছেন। তা বলে তিনি বাস্তব-বিমুখ নন। তার সিনেমার প্রধান বৈশিষ্ট্য যে রিয়ালিসম, তার ছাপ তার লেখা গল্প ও উপন্যাসের ভাষ্যে (একদম খাঁটি রূপকথা ধর্মী লেখা, যেমন “সুজন ও হরবোলা” বাদে) সুস্পষ্ট। এই রিয়ালিসম ও বিজ্ঞানের ভাষ্যে বলা ফ্যান্টাসির গুনেই শঙ্কু কাহিনী বাঙলা সাহিত্যে আর সবার চেয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।
    কিন্তু বাঙালী চিন্তাশীল। সাহিত্য ও কলার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা বিষয়ই কোন না কোন সময়ে বাঙালীর ব্যাবচ্ছেদের টেবিলে উঠেছে। কাজেই প্রফেসর শঙ্কু ও তার স্রষ্টা সত্যজিৎ কেন পার পাবে? সুতরাং উঠে এসেছে নানান তর্ক ও বিতর্ক। “শঙ্কু কল্পবিজ্ঞান হিসেবে কতটা দুর্বল? (যদিও সত্যজিৎ বাবু কোনোদিন দাবি করেন নি শঙ্কু কল্পবিজ্ঞান।) শঙ্কুতে অপ-বিজ্ঞানের এত বাড়বাড়ন্ত কেন? সত্যজিৎ রায় কি কল্পবিজ্ঞান লেখার যোগ্য ছিলেন? তিনি ত অর্থনীতি ও আর্টের ছাত্র! তিনি বিজ্ঞান বুঝতেন না বলেই গল্পে এমন আজগুবি ঘটনা ঘটিয়েছেন!” – এই সব আলোচনা ও প্রশ্ন নিয়ে বাঙালী ঝড় তুলেছে কফি-হাউসের টেবিলে।
    আজ ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু পিতৃহীন। জন্মদাতা পিতা ও স্রষ্টা পিতা কেউই আর ইহজগতে নেই। তাই জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি একটি শেষ ডাইরি লিখছেন। বয়সের দোষে এই ডাইরিতে ফিরে ফিরে আসছে তার জীবনের স্মৃতিরোমন্থন। তার স্রষ্টাই শুধু নয়, তাঁর ঘনিষ্ঠ মানুষ গুলোও আজ ক্রমশ তার জীবন থেকে মুছে যাচ্ছে। তার মেধার তেজ ও আজ অনেকটা স্তিমিত। তাই তার শেষ ডাইরি তে। মানুষ মাত্রেই যে ভুল হয় ও ত্রিলোকেশ্বরও নামে দেবতা হলেও আসলে পঞ্চভূতে (থুড়ি, অরগ্যানিক ও ইনরগ্যানিক কিছু মলিকিউলে) গড়া মানুষ তা এই ডাইরি তে তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন।
    কিন্তু তার স্রষ্টাতুতো ভাই প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ও তার চিরহরিৎ জ্যাঠা সিদ্ধেস্বরের মগজাস্ত্র ত আজো ক্ষুরধার। তারা এত সহজে মেনে নেবেন কেন? জীবনে প্রথমবার সিদ্ধেস্বর জ্যাঠা তাই কলম তুলে নিয়েছেন। (নিন্দুকেরা দেখুন হোমসের কুঁড়ে হুমদো মাইক্রফ্ট্ কোনদিন লিখবে প্রফেসর চ্যালেঞ্জারের হয়ে?) লিখেছেন এক দীর্ঘ সওয়াল। তার ভাইপো ফেলু যেখান থেকেই এই ডাইরি পেয়ে থাকুক, এই অমূল্য ডাইরি পরে ত আর চুপ থাকা যায় না। তবে হ্যাঁ, সিধু জ্যাঠা একটু গোলমাল করেছেন। আসলে ওনার জ্ঞান ভাণ্ডার এতোই প্রসারিত, যে ক্ষেত্র বিশেষে তা তার লেখায় একটু বেশি ব্যাবহার করে ফেলেছেন.

কুসংস্কার একটি ব্যাধি (মহুয়া মন্ডল রোল - 26)





কুসংস্কার একটি ব্যাধি। এটি সামাজিক ও মানসিক দুই হতে পারে বলে আমার ধারনা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা সামাজিক ভাবে প্রচলিত অনেক কুসংস্কার রয়েছে যা আমরা শিক্ষিত সমাজও দূরে ঠেলে দিতে পারছিনা একমাত্র মানসিক দন্ধ বা দ্বিধা থেকেই। ভ্রান্ত বিশ্বাস-সংস্কারের মধ্যে কোন প্রামাণিক ভিত্তি নেই । কুসংস্কার বা ভুল বিশ্বাসগুলো ছাড়া প্রচলিত বিশ্বাসের সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান হচ্ছে ‘অন্ধ বিশ্বাস’~ এবং অন্ধবিশ্বাস থেকেই কুসংস্কারের উৎপত্তি। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে আজ যখন মানুষ মঙ্গলে পাড়ি জমানোর আয়োজন করছে, মহাশূন্যে বসতি স্থাপনের তোড়জোড় করছে বিভিন্ন মরণ ব্যাধির বিরুদ্ধে তার অস্ত্রকে করে তুলেছে আরো শাণিত, মাতৃগর্ভের বাইরে সন্তান ধারণের চিন্তা করছে ঠিক সে সময়ে আমাদের দেশের এক বিরাট জনগোষ্ঠী মনে করে মানুষের চাঁদে যাবার ঘটনা ভিত্তিহীন তাদের ইমান নষ্ট করার পশ্চিমা ষড়যন্ত্র, ভূমিকম্পের সময় আজান দিলে ক্ষয়ক্ষতি হবে কম, ‘শেতলা দেবী’র পূজা দিলে বন্ধ হবে কলেরা~হরলিকস খেলে না কি ছেলে মেয়েরা ‘লম্বা-শক্তিশালী-বুদ্ধিমান’ হয়ে যায়। ডেটল সাবান না কি ৯৯% জীবাণু মেরে ফেলে । ফেয়ার-এন্ড-লাভলী (অথবা ফেয়ার-এন্ড-হ্যান্ডসাম) নাকি গায়ের রঙ ফর্সা করতে পারে । আধুনিক কুসংস্কার । এদেরকে বলা হয় অপবিজ্ঞান । সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানের একটি ইতিবাচক প্রভাব আছে । তাই বিজ্ঞানের মুখোশ নিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা অত্যন্ত সহজ । নানা রকম মানুষের নানা রকম সংস্কার আছে । কোন কোন সংস্কারকে আমরা কুসংস্কার বলি, কোন কোনটাকে ভালো মন্দ কিছুই না বলে প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে দেখি । যেমন অনেকে ১৩ সংখ্যাটিকে এড়িয়ে চলেন । আনলাকি থার্টিন বেশ প্রচলিত একটি সংস্কার।আমাদের দেশে লোডশেডিং-এ যত মোমবাতি জ্বলে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে মোমবাতি জ্বলে মন্দির মসজিদ গির্জা প্যাগোড়া ফকির দরবেশ আউলিয়াদের মাজারে । এই মানত করা মোমবাতির আলোতে মনের কুসংস্কারের অন্ধকার আরো গাঢ় হয়, আমরা এগিয়ে চলি অন্ধকারের দিকে। আরও অনেক কিছু বলা যেতে পারে কুসংস্কার নিয়ে। শিক্ষিত হলেই হবেনা সাথে মানসিক চিন্তাভবনারও পরিবর্তন ও প্রসার ঘটাতে পারলেই কুসংস্কার দূর করা সম্ভব। কারণ অনেক কুসংস্কার যেহেতু সামাজিক ভাবে উৎপন্ন যা যুগ যুগ ধরে প্রবাহমান আত আমাদের পরিবার ও শিক্ষার মাধমেই মনের মধ্যে গভীর রেখা ফেলে। তাই আগে শিক্ষার পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনের পক্ষপাতী আমি। ধন্যবাদ

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুচেতনা (মাম্পি বিশ্বাস . রোল 23)


যেদিন কবি জগৎকে অনুভব করলেন, সেদিন বিধাতার সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠল। পাখির গান আর নদীর প্রবাহ সংগীতময়। ফুল সুগন্ধময়। গাছ, নদী, মেঘ সব মিলে নয়নাভিরাম দৃশ্য। দখিনা বাতাসের স্পর্শ কত মধুর। এর সঙ্গে আছে প্রিয়জনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক আর তাদের মধ্য দিয়ে বিধাতার সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা।

কিন্তু তিনি পাঠকদের মনে করে দিয়েছেন এই বলে যে তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁর লেখায় তাঁর মৃত্যুচেতনা লক্ষ করেছেন। ‘জন্মিলে মরিতে হবে’- এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এ কথার উপলব্ধি অত্যন্ত গভীর ও জটিল। অনন্তকাল ধরে মানুষ জন্মেছে আবার চলেও গেছে। মৃত্যু তবু চির অজানা। চির অচেনা। তাই চির রহস্যময়। এসব কারণে ভীতিপ্রদও বটে। তাই মৃত্যু নিয়ে হয়েছে কত কাব্য রচনা। কত দর্শনের কত তত্ত্ব রচনা। কত ধর্মের কত নিবিড় কথা। কিন্তু কেউ আশ্বস্ত হতে পেরেছে কি তবু প্রশ্ন থেকে যায়, জীবনটা তবে কী কোনো বৈজ্ঞানিক এ প্রশ্নের উত্তর দিতে আজও পারেননি। যখন একটা জীবিত মানুষ মৃত ঘোষিত হয়, তখন কোন জিনিসটা তাকে ছেড়ে চলে যায় অণু-পরমাণুর তত্ত্ব দিয়ে তা ব্যাখ্যা করা যায়নি। কোথায় কার কাছে তা চলে যায় পরকালটা কোথায় নক্ষত্র আর চন্দ্র-সূর্যের মাঝখানে কোথায় মানুষ চলে যাবে মরণের পর আত্মা কী আত্মা অবিনশ্বর বলেন বিজ্ঞজনেরা। আত্মা কি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার অতীত এটা কি নিছক তত্ত্বকথা এই পৃথিবীটা যদি ক্ষণিকের হয়, তবে পরকালের আবাসভূমি কেমন, সে কথা তো দেখে এসে আমাদের বলেননি কেউ। আত্মার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার অভাবের কারণেই কি পরকাল সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন থেকে যায় এ কারণেই কি মৃত্যু রহস্যময় থেকে যায়

পরকালে যাওয়াটা যদি হবে আমাদের স্থায়ী ঠিকানা, সেখানে যাওয়াই যদি হবে বিধাতার সান্নিধ্যে যাওয়া, তবে প্রস্তুতিটা কেন সুখকর নয় এই অভিজ্ঞতা কি পৃথিবীর মায়া কাটাবার জন্য উদ্দেশ্যটা মহৎ হলেও পš’াটি খুব একটা সহৃদয় নয়। বুদ্ধদেব বসু ‘রবীন্দ্রনাথের শেষজীবন’ বর্ণনা করেছেন। ‘কঠিন রোগসঙ্কটের ছায়ায় দেশব্যাপী জয়ধ্বনির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের আশি বছর পুরলো।’ বুদ্ধদেব বসু আরো লিখেছেন, ‘মুখ তাঁর শীর্ণ, আগুনের মতো গায়ের রং ফিকে হয়েছে, কিন্তু হাতের মুঠি কি কব্জির দিকে তাকালে বিরাট বলিষ্ঠ দেহের আভা সেখানে পাওয়া যায়। কেশরের মতো যে কেশগুচ্ছ তাঁর ঘাড় বেয়ে নামত, তা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। মনে হলো তাঁর চোখের সেই মর্মভেদী তীক্ষ্ন ভাবটা আর নেই।’

বুদ্ধদেব বসুর বর্ণনা বড্ডই মর্মস্পর্শী। ‘রবীন্দ্রজীবনের এই অধ্যায় মহাকাব্যের উপাদান। মনে করা যাক দিগ্বিজয়ী একজন রাজা, ঐশ্বর্যের সর্বাঙ্গীণ পূর্ণতায় যাঁর জীবন কেটেছে, একদিন ভাগ্যের কুটিলতায় তাঁকে রিক্ত হতে হলো। রাজত্ব রইল, রইল অন্তরের রাজকীয়তা, কিন্তু যেসব পথ দিয়ে রাজার সঙ্গে রাজত্বের যোগাযোগ, সেগুলো বন্ধ হয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিপ্রেরণা অক্ষুণœ, অক্লান্ত তাঁর প্রতিভার উদ্যম কিন্তু দেহের যে সামান্য কয়েকটা যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া শিল্পরূপ প্রকাশিত হতে পারে না, তারা ঘোষণা করেছে অসহযোগ। তাঁর ইন্দ্রিয়ের দরজাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে আসছে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, শ্রবণশক্তি নিস্তেজ, আঙুল দুর্বল, তুলি ধরবার মতো জোর নেই, কলমও কেঁপে যায়।’ তিনি নাকি বলেন, ‘বিধাতা মুক্তহস্তেই দিয়েছিলেন, এবার একে একে ফিরিয়ে নিচ্ছেন।’

মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বা কোনো বিষয়ে মনোভাব গড়ে ওঠার কারণ থাকে। এই সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মানুষের অভিজ্ঞতা ও পরিবেশ। জীবনস্মৃতি গ্রšে’র ‘মৃত্যুশোক’ প্রবন্ধে প্রিয়জন হারানোর বেদনা ব্যক্ত করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি লিখেছেন যে তাঁর মায়ের যখন মৃত্যু হয়, তখন তাঁর বয়স অল্প, মায়ের যখন মৃত্যু হয়, তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। পরদিন সকালে যখন তিনি মৃত্যুসংবাদ শোনেন তখন তিনি ‘সে কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ করতে পারেননি।’ তিনি দেখেছিলেন মায়ের দেহ, সুসজ্জিত দেহ খাটের ওপর শোয়ানো। ‘জীবন থেকে জীবনান্তের বিচ্ছেদ স্পষ্ট করে তাঁর চোখে পড়েনি।’ তিনি লিখেছেন, ‘যে ক্ষতি পূরণ হইবে না, যে বিচ্ছেদের প্রতিকার নাই, তাহাকে ভুলিবার শক্তি প্রাণশক্তির একটি প্রধান অঙ্গ, শিশুকালে সেই প্রাণশক্তি নবীন ও প্রবল থাকে, তখন সে কোনো আঘাতকে গভীরভাবে গ্রহণ করে না, স্থায়ী রেখায় আঁকিয়া রাখে না।’ কিন্তু তাঁর ২৪ বছরের সময় ‘মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল, তাহা স্থায়ী পরিচয়।’ তিনি লিখলেন, ‘অধিক বয়সে মৃত্যুকে অত সহজে ফাঁকি দিয়া এড়াইয়া চলিবার পথ নাই।’ এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো একটা শূন্যতা অনুভব করলেন। ‘যাহা আছে এবং যাহা রহিল না, এই উভয়ের মধ্যে কোনোমতে মিল করিব কেমন করিয়া!’ তিনি লিখলেন, ‘শূন্যতাকে মানুষ কোনোমতেই অন্তরের সঙ্গে বিশ্বাস করতে পারে না। যাহা নাই, তাহাই মিথ্যা, যাহা মিথ্যা তাহা নাই।’

কবিগুরু এরপর একটা অপূর্ব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। আমি প্রায় ২৫ বছর প্রবীণদের মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করেছি। অনেক শোকার্ত মানুষের গভীর উপলব্ধি হৃদয় দিয়ে শুনেছি। কিন্তু এমনটি শুনিনি। মানুষের অনুভূতি একান্তই ব্যক্তিগত। কবিগুরু লিখেছেন, ‘তবু এই দুঃসহ দুঃখের ভিতর দিয়া আমার মনের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে একটা আকস্মিক আনন্দের হাওয়া বহিতে লাগিল, তাহাতে আমি নিজেই আশ্চর্য হইতাম।’ এই অপূর্ব অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন তিনি, ‘যাহাকে ধরিয়াছিলাম, তাহাকে ছাড়িতেই হইল, এইটাকে ক্ষতির দিক দিয়া দেখিয়া যেমন বেদনা পাইলাম, তেমনি সেই ক্ষণেই ইহাকে মুক্তির দিক দিয়া দেখিয়া একটা উদার শান্তি বোধ করিতাম।’ মৃত্যুর এই অভিজ্ঞতায় ‘বৈরাগ্যের ভিতর দিয়া প্রকৃতির সৌন্দর্য আরো গভীরভাবে রমণীয় হইয়া উঠিয়াছিল।’

সৈয়দ মুজতবা আলি তাঁর ‘বড়বাবু’ গ্রšে’ ‘মৃত্যু’ নামে একটি হৃদয়গ্রাহী প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন কিভাবে রবীন্দ্রনাথ একে একে অতি আপনজন হারিয়েছেন। প্রাণাধিকা বৌদিকে হারানোর পর বড়ভাই গত হলেন, পিতা গত হলেন। স্ত্রী মৃণালিনী দেবী মারা গেলেন প্রায় ৩০ বছর বয়সে যখন কবির বয়স ৪১। এরপর মারা গেলেন দ্বিতীয়া কন্যা রেণুকা। বছর চারেক পরেই কলেরায় মারা গেলেন পুত্র শমিন্দ্রনাথ ১৩ বছর বয়সে। এর প্রায় বছর দশেক পরে মৃত্যুমুখে পতিত হলেন বড় মেয়ে মাধুরীলতা। ৭১ বছর বয়সে কবি হারালেন তাঁর স্নেহের নাতি বিদেশে অধ্যয়নরত নীতুকে।

কবি একদিন মৈত্রেয়ী দেবীকে বলেছিলেন, ‘তোমরা যাকে ভালোবাসা বল, সে রকম করে আমি কাউকে কোনোদিন ভালোবাসিনি। বন্ধু-বান্ধব, সংসার, স্ত্রী-পুত্র কোনো কিছুই আমি তেমন করে আঁকড়ে ধরিনি। ভেতরে একটা জায়গায় আমি নির্মম, তাই আজ যে জায়গায় এসেছি, সেখানে আসা আমার সম্ভব হয়েছে। তা যদি না হতো, যদি জড়িয়ে পড়তুম তা হলে আমার সব নষ্ট হয়ে যেত।’ লেখক হিরন্ময় ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং তাঁর ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য এই যে তারা ভেঙে পড়ে, তিনি অসীম শক্তি দিয়ে নিজেকে সংযত রাখতেন।’ 

ধনী ও দরিদ্র কে ভাগ করে ফেলেছে GLOBALIZATION (তন্দ্রিমা দাশ , রোল : ৪৯)


সম্প্রতি বিবিসি গ্লোবাল পোল সারা বিশ্বে
গ্লোবালাইজেশনের অগ্রগতির ফল নিয়ে জরিপ করেছে। ৩৪ দেশের অর্ধেক জনগণের মত, গ্লোবালাইজেশনের অগ্রতির হার খুব দ্রুত গতিতে হচ্ছে, যেখানে ৩৫% জনগণের মত গ্লোবাইলাইজেশনের অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে চলছে।



এটা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত যে, একদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফল সঠিকভাবে ভাগাভাগি না হয়েই বিশ্বের ধনীর দেশগুলোতে গ্লোবালাইজেশন শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।

বিশ্বের বেশিরভাগ দরিদ্র দেশগুলোর জনগণ মনে করে গ্লোবালাইজেশনের এগিয়ে যাওয়া খুব ধীর গতির, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধা এবং দায় সঠিকভাবে বন্টন হচ্ছে না।

এই জরিপের কো-স্পন্সর এবং ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল পলিসি অ্যাটিচিউড প্রোগ্রামের স্টিভেড কুল বলেন, উন্নয়নশীল দেশের জনগণের মত, তাদের দেশের অন্যায়-অবিচারগুলো ভাঙতে গ্লোবালাইজেশনের ভূমিকা শক্তিশালী। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, কেনিয়া এবং ম্যাক্সিকোতে গ্লোবালাইজেশন এবং অর্থনৈতিক উন্নতির ফলে সঠিক বিভাজন খুবই শক্তিশালী।

জরিপকৃত ৩৪টি দেশের মধ্যে ২৭টি দেশের ৬৪% জনগণ বিশ্বাস করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধা সঠিকভাবে বিভাজিত হচ্ছে না। চীন হচ্ছে একটি ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত যারা শেষ ১০ বছরে ১০% বার্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

জরিপে পাওয়া গেছে, চীনের নগরবাসীরা বলছে, তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সঠিকভাবে ডিস্ট্রিবিউট করা হচ্ছে। এমনকি অর্থনীতিবিদেরাও বলছে, চীনের নগর এবং গ্রামের ব্যবধান দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।

কিন্তু চায়নিজরা গ্লোবালইজেশনের অগ্রগতির ব্যাপারে প্রখর দৃষ্টি দিচ্ছে, যা সাংহাইয়ের ফিজিক্যাল এবং সোস্যাল ল্যান্ডস্ক্যাপে নাটকীয়ভাবে বদলের চিত্রে প্রকাশ পায়। কিছু নতুন বাজার সম্পন্ন দেশের ক্ষেত্রে গ্লোবালাইজেশন অর্থনীতির চেয়ে অনেক বেশি সামাজিক দিককে কেন্দ্র করে এগুচ্ছে।

একই প্যাটার্ন অ্যাপ্লাই করা হয়েছে ভারতের ডিজিটাল নগরী ব্যাঙ্গালোরে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবনতি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, আরো দেখা যাচ্ছে বিশ্বের শেয়ার বাজার নিম্নমুখী। এ অবস্থা ছিল এ সার্ভের পূর্বে। ইউনাইটেড স্টেটের ২২% নাগরিক মনে করে অর্থনীতির এ ধরনের পরিস্থিতি ভালো অবস্থান সৃষ্টি করবে তাদের দেশের জন্য, অপরদিকে ৭৮% এর উল্টোটা মনে করে। ফ্রান্স, ইতালি এবং জাপানের নাগরিকরা সমানভাবে হতাশাগ্রস্ত। তবে, ফ্রান্সের ২২% এবং জাপানের ৩৩% নাগরিক মনে করে এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে।

অন্যদিকে এ অবস্থার ঠিক উল্টোটা ঘটেছে চীন, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউএইতে। এ দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নতির ফল পাচ্ছে তেল এবং মিনারেল পণ্যের দাম বাড়ার ফল এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

যে বিষয়টা এর মধ্যে নাড়া দিচ্ছে তা হলো ওয়েস্টার্ন ইউরোপীয়ান দেশগুলোর সামাজিক মডেল উন্নয়নে গ্লোবালাইজেশন শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। ইউএস এবং উইকে’র উন্নতি খুবই ধীর গতির হয়ে গেছে এবং বৈষম্য বাড়ছে খুব দ্রুত। বিবিসি’র জরিপ কাজে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব স্ক্যানের পরিচালক ডগ মিলার বলেন, অর্থনৈতিক দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রে জনগণের সরাসরি ইনভলভমেন্ট রয়েছে। তাছাড়া গ্লোবালাইজেশনের অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফল এবং দায়ভার দুটোরই বিভাজন হওয়া প্রয়োজন।

এ জরিপের সূত্রে গ্লোব স্ক্যান আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চিলি, চীন, কোস্টারিকা, মিশর এল সালভেডর, ফ্রান্স, ঘানা, জার্মান, গ্রেট ব্রিটেন, গুয়েতেমালা, হোন্ডুরাস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইজরায়েল, ইতালি, জাপান, কেনিয়া, লেবানন, ম্যাক্সিকো, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, পানামা, ফিলিপাইন, পর্তুগাল, রাশিয়া, সাউথ কোরিয়া, স্পেন, তুর্কি, ইউএই এবং ইউএসের ৩৪,৫২৮ জন লোকের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছে।